অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউক্রেনের খেরসন থেকে সেনা প্রত্যাহারের তিন দিন পর সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম জে বার্নস রুশ গোয়েন্দা প্রধান সের্গেই নারিশকিনের সঙ্গে দেখা করেন। একটি রুশ সংবাদ মাধ্যম ও মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় আল-জাজিরা।
তবে মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল থেকে জানানো হয়েছে, উইলিয়াম জে বার্নসের এ বৈঠক কোনোভাবেই ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো মীমাংসা নিয়ে আলোচনার জন্য নয়। মূলত ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে সতর্ক করার জন্যই বার্নস সোমবার (১৪ নভেম্বর) তুরস্কে রুশ গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন।
হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্রও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, আঙ্কারায় বার্নসের বৈঠকে যুদ্ধের মীমাংসা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
মার্কিন সরকারি নিরাপত্তা সংস্থাটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই সফরের বিষয়ে ইউক্রেনকে আগেই জানানো হয়েছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে আলোচনা শুরু হলে সেটির দিক নির্দেশনা দেবে ইউক্রেন, এখানে যুক্তরাষ্ট্র কিছু বলবে না।
তবে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান এই যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য ইউক্রেনকে চাপ দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে একটি মত বিরোধ দেখা দিয়েছে। মার্কিন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে পরামর্শ দেওয়া হয়, যুদ্ধে সাম্প্রতিক অর্জন ধরে রাখতে হলে ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে বসা উচিত।
সোমবারের বৈঠকের বিষয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, বৈঠকে রাশিয়ায় আটক আমেরিকানদের মুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি এস পেসকভ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বৈঠকটি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে শুরু হয়েছে। তবে আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশে রাজি হননি তিনি।
এদিকে সিআইএর একজন মুখপাত্রের সঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমস যোগাযোগ করলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। মুখপাত্র জানান, সিআইএ প্রধানের কোনো ভ্রমণের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয় না।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার বিষয়ে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অনেকটা প্রকাশ্যেই তাদের আশাবাদের কথা জানিয়েছেন। এ ধরনের একটি আলোচনা আঙ্কারায় শুরু হয়েছিল। তবে সেটি শেষ পর্যন্ত এগোয়নি।
সেই ঘটনার পর ছয় মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারাও আশা করছেন আলোচনা শিগগিরই শুরু হবে। মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতাদের এখনকার লক্ষ্য যুদ্ধ যাতে কোনোভাবেই ইউক্রেনের ভূখণ্ড অতিক্রম না করে।
তারা যে কোনো মূল্যে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বা গণ বিধ্বংসী অন্য অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছেন। অবশ্য মস্কো ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবর পুতিন বরাবর অস্বীকার করেছেন।
যদিও জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করছেন, রাশিয়ার সামরিক নেতারা সম্প্রতি ইউক্রেনে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এদিকে বাইডেন প্রশাসন ডব্লিউএনবিএ তারকা ব্রিটনি গ্রিনার ও গুপ্তচর পল হোয়েলানকে ফেরাতে রাশিয়ার সঙ্গে বন্দী বিনিময়ের জন্য আলোচনায় বসার চেষ্টা করছে। ২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন কর্মকর্তারা জেনেভায় পুতিন ও বাইডেন বৈঠকের একটি পথ খোঁজার কথা বলেছিলেন।
বাইডেন প্রশাসন দুই মার্কিন নাগরিকের মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী রুশ অস্ত্র ব্যবসায়ী ভিক্তর বাউতকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
অপরদিকে এরআগেও সিআইএ প্রধান বার্নসকে ইউক্রেনের বিষয়ে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপের জন্য পাঠানো হয়েছিল। পুতিন গত ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ শক্তি নিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়ার আগে, বার্নস ২০২১ সালের নভেম্বরে মস্কোতে গিয়েছিলেন। সেখানে বার্নস ভিডিও কনফারেন্সে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন।
Leave a Reply